ঘরোয়া পদ্ধতিতে কমান রক্তস্বল্পতার/অ্যানিমিয়ার প্রকোপ

0
362
রক্তস্বল্পতা

আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার মতো রোগের প্রকোপ চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পয়েছে। আর এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে আমাদের দেশের মোট মহিলা নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশই অ্যানিমিক। যার মধ্যে প্রায় ৭২.১২ শতাংশেরই বাস পূর্ব ভারতে। এত সংখ্যক মানুষ যখন রক্তাঅল্পতার শিকার তখন একথা বলতেই হয় যে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় যদি অ্যানিমিয়াকে আটকানো না যায়, তাহলে তো সারা দেশের জন্যই বিপদ, তাই না! প্রসঙ্গত, এই রোগের প্রকোপ থেকে পশ্চিমী দুনিয়া বেঁচে রয়েছে, এমনটা ভেবে নেওয়ার কিন্তু কোনও কারণ নেই। পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে প্রায় ৩০ লক্ষ আমেরিকান এই রোগের শিকার। কী এই অ্যানিমিয়া? আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা যখন কমতে শুরু করে তখন সেই রোগকে অ্যানিমিয়া বলা হয়। প্রসঙ্গত, লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে থাকে হিমোগ্লোবিন নামে এক ধরনের প্রোটিন, যা শরীরে প্রতিটি কোণায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে থাকে। এবার বুঝতে পারছেন তো শরীরে লহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দেখা দিলে কতটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এখন প্রশ্ন হল কীভাবে অ্যানিমিয়ার মতো রোগের প্রকোপকে কমানো যেতে পারে? এক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে আয়রন ট্যাবলেট খেতে পারেন। তবে বেশ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে যা অল্প সময়ের মধ্যেই শরীরে রক্তের ঘাটতি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কী সেই সব ঘরোয়া চিকিৎসা? চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে।
১. বিটরুট: এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ, যা শরীর এই খনিজের ঘাটতি দূর করে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, শরীরে জমে যাকা টক্সিক উপাদান বরে করে দিয়ে আরও সব রোগের হাত থেকে বাঁচাতেও এটি বিশেষ কাজে লাগে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো বিটরুটের সঙ্গে তিনটে গাজর এবং অর্ধেক রাঙা আলু ব্লেন্ড করে সেই রস প্রতিদিন খেতে হবে। আর যদি এই রস খেতে ইচ্ছা না করে তাহলে রান্না করেও বিটরুট খেতে পারেন। তাতেও সমান উপকার পাবেন।

আরও পড়ুনঃ   শীতে জ্বর-সর্দি সারতে আদা-রসুনের স্যুপ কতটা কার্যকর?

২. পালং শাক: অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে পালং শাকের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এতে উপস্থিত আয়রণ এবং ভিটামিন বি১২ শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে পুষ্টির অভাব যাতে দেখা না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন আমাদের শরীরে যে পরিমাণ আয়রণের প্রয়োজন পরে, তার প্রায় ৩৫ শতাংশ পূরণ করতে পারে হাফ কাপ পালং শাক। প্রসঙ্গত, রক্তাল্পতা দূর করতে প্রতিদিন যদি দিনে দুবার করে পালং শাকেরে রস খেতে পারেন তাহলে দারুন উপকার পাওয়া যায়।

৩. ডালিম: এই ফলটিকে রক্তবীজ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। কেন এমন নামে ডাকা হয় জানেন? কারণ শরীরে লহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর করতে এই ফলটি দারুন কাজে আসে। আসলে ডালিমে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন সি রক্তের ঘাটতি দূর করার পাশপাশি সার্বিকভাবে শরীরের গঠনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে এক কাপ ডালিমের রসের সঙ্গে একটা চামচের এক চতুর্থাংশ দারচিনি পাউডার এবং ২ চামচ মধু মিশিয়ে ব্রেকফাস্টের সময় খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। আর যদি এই মিশ্রনটি খেতে না চান, তাহলে শুধু ডালিম ফলও খেতে পারেন। তাতেও একই ফল মেলে।

৪. তিল বীজ: আয়রণ সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে এটি দারুন কাজে দেয়। একটা কাপের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ তিল বীজ, দৈনিক আয়রনের চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশের যোগান দেয়। তাই তো রক্তাল্পতা দূর করতে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিকে এতটা গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা। পরিমাণ মতো জলে দু চামচ তিল বীজ, কম করে ২-৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। সময় হয়ে গেলে জলটা ফেলে দিয়ে বীজগুলি সংগ্রহ কর সেগুলি বেটে নিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার সেই পেস্টে ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন, দিনে দুবার এই মিশ্রনটি খেতে হবে। তবেই রোগ সারবে।

আরও পড়ুনঃ   ঘরে বসে খুব সহজেই তৈরি করুন কাশির সিরাপ!

৫. খেজুর: শরীরে আয়রণের ঘাটতি দূর করার পাশপাশি সার্বিকভাবে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া শুরু করুন। এক্ষেত্রে এক কাপ দুধে মাত্র ২ টি খেজুর ফেলে সারা রাত রেখে দিন। পরদিন সকালে সেই খেজুর মেশানো দুধ খালি পেটে খেয়ে নিন। কয়েকদিন এমনটা করলেই দেখবেন অ্যানিমিয়া দূরে পালাবে।

৬. আপেল: আপনি কি রক্তাল্পতায় ভুগছেন? চাহলে প্রতিদিন কম করে একটা আপেল খাওয়া শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন অল্প দিনেই আপনার রোগ সেরে যাবে। আসলে এই ফলটিতে প্রচুর মাত্রায় আয়রণ রয়েছে, যা শরীরে এই খনিজের ঘাটতি দূর করে লহিত রক্ত কমিকার সংখ্যা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৭.দই এবং হলুদ: আয়র্বেদ শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক বইয়ে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে এক কাপ দইয়ে ১ চামচ হলুদ মিশিয়ে যদি সকাল-বিকাল খাওয়া যায়, তাহলে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা কমতে সময় লাগে না।

৮.লেবু: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে ভিটামিনের মাত্রা বাড়তে থাকলে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, তেমনি দেহের অন্দরে আয়রনের শোষণ বেড়ে যায়। ফলে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। এই কারণেই তো প্রতিদিন লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৯.কলা: শরীরে শুধুমাত্র পাটাশিয়ামের ঘাটতি দূর করতেই নয়, আরও নানা উপকারে লাগে এই ফলটি। আসলে কলায় উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরে হিমোগ্লবিনের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি লহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন, দিনে দুবার একটা কলা, ১ চামচ মধুর সঙ্গে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। অ্যানিমিয়া রোগকে দূরে রাখতে এই নিয়মগুলি মেনে চলা জরুরি:

১. আয়রণ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে।

২. শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দিনে কম করে ২ বার স্নান করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ   এক বা দু চামচ মধু যেভাবে বদলে দেবে আপনার জীবন

৩. প্রতিদিন সকালে কম করে ১০ মিনিট রোদে দাঁড়াবেন। এমনটা করলেও দারুন উপকার পাবেন।

৪. রোজের ডায়েটে দানা শস্য থাকা মাস্ট!

৫. সবুজ শাক-সবজি এবং ফল বেশি করে খেতে হবে।

৬. মেন কোর্স খাওয়ার সময় চা বা কফি খাওয়া চলবে না।

৭. প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে।

সূত্রঃ বোল্ডস্কাই

রক্তশূন্যতার কারণ ও করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − twelve =