কলারোয়ায় ক্লিনিকে প্রতারণা

0
239
ক্লিনিকে প্রতারণা
কলারোয়ায় ক্লিনিকে প্রতারণা

কলারোয়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যে যার মতো বাসা বাড়ির খুপড়ি ঘরে এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আনুকূল্য লাভ ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে এসব মানুষ ঠকানোর ফাঁদ পাতলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব।
অভিযোগ রয়েছে এসব অবৈধ ক্লিনিক সির্ভিল সার্জনকে টাকা দিলে সব বৈধ হয়ে যায়। আর সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা রয়েছে টাকায় তিনি দিনকে রাত বানাতে পটু। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কলারোয়া ২৫টির মতো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। অবস্থাদৃষ্টে যে কারোরই মনে হবে হকারদের ফুটপাথে দোকান পাতানোর মতোই অবস্থা।
কথা হয় ক্লিনিক থেকে রোগী নিয়ে আসা আছিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার নাতনির পেটে ব্যথা হলে প্রতিবেশী গ্রাম্য ডাক্তারের সহায়তায় নাতনিকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ক্লিনিকে এক সেবিকা নাতনির পেট টিপে জানায় প্রথম গর্ববতী বলে এখন একটু আধটু ব্যথা করতেই পারে। নাতনি অবিবাহিত জানালে সেবিকা লজ্জা পেয়ে বলে চিন্তার কিছু নেই। ভর্তি করেন ডাক্তার এসে এপেন্ডিসাইটিস কেটে দিলে সব সেরে যাবে। নানা রকম পরীক্ষার পর ডাক্তার এসে অপারেশন করার পর গতকাল তিনি নাতনিকে নিয়ে বাড়ি যান। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, এসব মানুষ মারার কল। এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নাতনির পেট কেটে তা ফের সেলাই করে এক কাঁড়ি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে ক্লিনিক মালিক বলে তিনি অভিযোগ করেন। সেবার নামে মানহীন এসব ক্লিনিকে কোনো প্রকার নিয়মকানুন না মেনে দিনের পর দিন চলছে রোগী ঠকানোর প্রতিযোগিতা।
সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছামতো টাকা হাতিয়ে নেয়া এসব ক্লিনিক মালিকে সাথে যোগ হয়েছে একশ্রেণির ডাক্তার নামের ভুয়া চিকিৎসক। সারা দিন ওত পেতে বসে থাকা এসব ক্লিনিকে আছে কিছু নার্স। যাদের কোনো ডিপ্লোমা সনদও নেই। অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে এমন সব গরিব ঘরের মেয়েদের গায়ে সাদা গাউন পরিয়ে নার্সের কাজ দেয়া হয়েছে।
আনিছুর রহমান বাতের রোগী। ডাক্তার বলেছে, রক্ত ও প্রস্রাবসহ কয়েকটি পরীক্ষা করাতে হবে। ভালো রিপোর্টের জন্য তিনি কলারোয়ার তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করালেও রিপোর্ট হয়েছে তিন ধরনের। এখন ডাক্তার কোন রিপোর্টটি গ্রহণ করবেন এ চিন্তায় তারা মন খারাপ। রিপোর্ট ধেকে আনিছুর রহমান বলেন, এসব ডায়াগনস্টিকের হাতুড়ে পরীক্ষকরা নানা ছলেবলে তার পকেট ফাঁকা করে দিয়েছে। এখন বাড়ি ফেরার পয়সাও নেই তার কাছে। ক্লিনিকগুলোর ভিতরের অবস্থা আরো নাজুক। টয়লেট বাথরুমগুলোর মধ্যে পুঁথি গন্ধময় পরিবেশ। রোগীদের বেডে ছারপোকার বাসা। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নেই। সিজার করা রোগীদের সবাই থাকে মৃত্যু ঝুঁকিতে। দু-একটি ছাড়া প্রায় সবগুলো ক্লিনিকে কোন অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। একজন সিজারিয়ান ডাক্তার সিজার করে চলে যান। নবজাতকের কোন সমস্যা দেখা দিয়ে মা থাকে ক্লিনিকে আর শিশু নিয়ে দৌড়াতে হয় যশোর-খুলনায় শিশু বিশেষজ্ঞ’র কাছে। রোগীদের এসব অমানবিক টানাটানিতে মত্যুর ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন নীরব।
সিভিল  সার্জন অফিস সূত্রে জান গেছে, কলারোয়া উপজেলায় ঝিকরা এলাকার সাকিব মেমোরিয়াল ক্লিনিক, হাসপাতাল রোডের মিতালি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সার্জিক্যাল ক্লিনিক, হাসপাতাল রোডের পুপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গয়গা বাজারের আছিয়া মেমোরিয়াল নার্সিং হোম, হাসপাতাল রোডের হাছান প্যাথলজি সেন্টার, একই এলাকার মুন্না ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডার্ন ক্লিনিক, সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্টার পা্যাথলজি সেন্টার, জনবেসা ক্লিনিক, সোনাবাড়িয়া এলাকার সোনাবাড়িয়া নার্সিং হোম, সরসকাঠি বাজারের পল্লী সেবা ক্লিনিক, হাসপাতাল রোডের মাতৃসেবা ক্লিনিক, একই এলাকার সাইমুন প্যাথলজি সেন্টার, হাসাপাতাল রোডের আরোগ্য প্যাথলজি সেন্টার, বালিয়াডাঙ্গা বাজারে আবদুল হাকিম সার্জিক্যাল ক্লিনিক, কাজিরহাট বাজারে নাসিমা ক্লিনিক, থানা মোগের হাফিজা ক্লিনিক হাসপাতাল রোডের কলারোয়া নার্সিং হোম, একই এলাকার শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল ও গয়ড়া বাজারে মায়ের হাসি ক্লিনিক। কলারোয়ার শিশু মৃত্যু রোধসহ সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন এলাকাবাসী। কলরোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন জানান, তিনি নবাগত। এ বিষয়ে তার বিস্তারিত জানা নেই।  সিভিল সার্জন ডা. তহিদুর রহমান জানান, কাগজপত্র নেই এ কথা সঠিক। ইতিমধ্যে কয়েক জন ক্লিনিক মালিক আবেদন করেছেন। যাচাই বাচাই ছাড়া নবায়ন করা হবে না। যে সকল ক্লিনিক অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুনঃ   ভয়াবহ ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচাবে ডিম

ইয়ারব হোসেন, সাতক্ষীরা থেকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 − fifteen =