পাবনায় ইনএনটি চিকিৎসক হারুনার রশিদের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু পথযাত্রী এক রোগী। বেঁচে থাকার লড়াই ও বেদনার মাত্রা যেন কিছুতেই কমছে না। গত ২ ডিসেম্বর হতে চলছে এখন পর্যন্ত। ভূক্ত ভোগী এম এ হাশেম (৪০) ভুগছিলেন টনসিলাইটিসে। কনজারভেটিড ট্রিটমেন্টে কোন সমাধান হচ্ছিল না, তাই সিদ্ধান্ত অপারেশন করানোর। তোহুরুল ও টিক্কা মিথ্যাচার ও প্রতারণার করে ভর্তি করলেন তাদের মালিকানাধীন যমুনা ক্লিনিকে।
অপারেশন করানোর কথা ছিল ইএনটির একজন প্রফেসর দিয়ে। কিন্ত অপারেশন করেছেন ডা: হারুন অর রশিদ নামে একজন চিকিৎসক। রোগীর আত্বীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, অপরেশন শেষে রোগীর জ্ঞান ফিরলে তার দু চোখ দিয়ে অঝরে পানি গড়িয়ে পরে । কথা বলতে না পারায় ইশারা ইংগিতে কাগজ কলম চান। তিনি লিখে জানান অপারেশনের সময় যারা উপস্থিত ছিলো তাদের সবাইকে দেখতে পাই এবং অপারেশনের সময় তীব্র যন্ত্রনায় যখন হাত পা নাড়াতে থাকি তখন ৫-৬ জন এসে শক্ত করে হাত-পা চেপে ধরে এবং ডাক্তার অপারেশন করে। এরপর কি হয়েছে বলতে পারি না।
তিনি আরো জানান আমি শুধু টনসিল সমস্যার কথা বললেও ডাক্তার সাহেব আমার নাক ও গলার মারাত্বক সমস্যা আছে বলে জানান এবং আজই অপারেশন করার কথা বলেন, আমি তাতে রাজি হই। রোগী এম এ হাশেম বলেন, অপারেশন করা হয় ২ ডিসেম্বর । নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরা সত্তেও ডিসেম্বর ৩, ২০১৭ তে ক্লিনিক থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। বলা হয় কিছু সময়ের মধ্যে রক্ত পরা বন্ধ হয়ে যাবে, এখন বাড়ি চলে যান। বাড়ি যারার পর সমস্য বাড়তে থাকে। নাকমুখ দিয়ে রক্তঝরা অব্যহত থাকে, নাক কান মুখ গলা ফুলে যায়।
যমুনা ক্লিনিকের মালিক ও ডা: হারুন অর-রশিদ কে ফোন করলে তারা কেউ রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। রোগীর শারিরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ডিসেম্বরের ৬ তারিখে পাবনা তে অন্য একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসকের আন্তরিকতায় ও চিকিৎসায় রক্ত ঝরা বন্ধ হলেও তার সার্বিক উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে গত ৯ ডিসেম্বর তাকে রিলিজ দেন এবং ঐ তারিখেই পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসকদের পেশাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসায় রোগীর শারিরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই জন কনসালটেন্ট বলেন একই সাথে নাকের দু’পাশের পলিপস ও টনসিলেক্টমি করা খুব-ই বিরল ঘটনা। এটা পেশাগত চরম দায়িত্বহীনতা। জীবন বাঁচানোর জন্য এমন ঝুঁকি নেয়া যায়, কিন্তু এমন কাজ করে জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলানো উচিত নয়। এটা চরম হেয়ালীপনা ও ছেলে মানুষী। তাঁরা আরো বলেন” সঠিক যন্ত্রপাতি, উপযুক্ত পরিবেশ, চিকিৎকের অভিজ্ঞতা ও তার ওভার কনফিডেন্ট থাকলে এবং অপারেশনের পরে তার ক্লোজ অবজারভেশনে রাখতে পারলে-ই কেবল এমন কাজটি করা যেতে পারে। নইলে যে কোন মুর্হুতে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে যমুনা ক্লিনিকের মালিক ও ডা: হারুন-অর-রশিদ এটা জানতে পেরে সংশ্লিণ্ট চিকিৎসক ও রোগীর আত্বীয় স্বজনদের হুমকি দিতে থাকেন।
অন্যান্য চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করে জানা যায় ডা: হারুন-অর-রশিদ প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটান। এই রোগীর অপারেশন সম্বন্ধে অনেকের মন্তব্য শুনা যায় যে রোগীর টনসিল অপারেশন করতে গিয়ে জিহবার গোড়ার দিকে আংশিক কেটে ফেলে এবং ওখানকার একটি আরটারী (রক্ত নালী) কেটে ফেলে। রোগীর অর্থনৈতিক ক্ষতি, শারিরিক ক্ষতি, জীবন ঝুঁকি, পরিবারের কান্না ও হতাশার জবাব দেবে কে? এ ব্যাপারে সিভিল সার্জনের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পাবনার সিভিল সার্জন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদুল ইসলাম রঞ্জু
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি