এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিককে কে বলুন বাই বাই

0
533
এসিডিটি , গ্যাস্ট্রিক

যে কাজটি করলে আর কখনোই আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকবে না!

আমাদের পাকস্থলী পরিপাক প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য এক ধরনের এসিড নিঃসরণ করে। আর এসিডিটি তখনই হয় যখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি এসিড নিঃসরণ হয়। যখন বুক, গলা জ্বলবে এবং গ্যাস ফর্ম হবে বুঝতে হবে এসিডিটি হচ্ছে। সাধারনত অনেকক্ষণ কিছু না খেলে অথবা বেশি ভাজাপোড়া, তেল মশলা জাতীয় খাবার খেলে এমনটি হয়। ভাবছেন তাহলে কয়েকদিন পর যে বন্ধু বা আত্মীয়ের বিয়ে আছে সেখানে মজাদার সব খাবার কি শুধু চোখে দেখতে হবে চেখে দেখা যাবে না? ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, সেই ভোজনবিলাসীদের সুবিধার্থে আজ আমি এসিডিটি থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় বলে দেব। এসিডিটির জন্য দামী দামী ওষুধ কেনার কোন দরকার নাই, কিছু সাধারণ উপাদান যা আমাদের রান্না ঘরেই পাওয়া যায় ট্রাই করে দেখুন আর তফাৎটা নিজেই বুঝে নিন।

০১. HCL লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখুনঃ

এসিডিটি প্রতিরোধের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে HCL উৎপন্নের পরিমাণটা প্রাকৃতিক উপায়ে কমিয়ে আনা। সিম্পল উপায় হলো আমরা সচরাচর যে লবণ খেয়ে থাকি ঐটার পরিবর্তে উচ্চমানের সি সল্ট খেতে হবে। সি সল্টে প্রয়োজনীয় মিনারেল এবং ক্লোরাইডে ভরপুর থাকে। যারা দেশের বাইরে থাকেন ওয়ালমারটে সহজেই Hain Sea Salt,Morton Sea Salt পেয়ে যাবেন।

আর আমার দেশী পাঠকেরা বড় বড় দোকান গুলোতে খুঁজে দেখতে পারেন। কিন্তু না পেলে হতাশ হবেন না, অপেক্ষা করুন আপনার জন্য আরও অনেক উপায় বলে দিচ্ছি।

০২. প্রসেসড ফুডের সাথে অরগানিক ফুড অদল বদল করুনঃ

প্রসেসড ফুড একজন এসিডিটিতে ভুক্তভোগির জন্য যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত। প্রসেসড ফুড যেমন – চিপস, কুকিজ, পিজ্জা পরিপাক তন্ত্রে ব্যাকটেরিয়াল ভারসম্যের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তাজা সবজি এবং ফলমুল খান।

আরও পড়ুনঃ   এসিডিটি কমানোর চমৎকার ১০টি উপায়

০৩. বেকিং সোডাঃ

বাইকার্বনেট সোডা এসিডিটির চিকিৎসার অন্যতম প্রধান উপাদান। এক চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন আর মুহূর্তেই চনমনে হয়ে উঠুন। কিন্তু যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী বা যাদের সোডিয়াম খাওয়া মানা আছে তারা এই পদ্ধতির বদলে অন্যটা চেষ্টা করুন।

০৪. ঘৃতকুমারীর রসঃ

ঘৃতকুমারী বা aloe vera তো আমাদের দেশে এখন খুব সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সাথে এসিডিটির সমস্যাও সমাধান করে দেয়। এক আউন্স ঘৃতকুমারীর রসের সাথে ২ আউন্স পানি মিশিয়ে পান করুন।

০৫. কাঁচা খাবার গ্রহনের প্রতি মনোনিবেশ করুনঃ

রিসার্চের মাধ্যমে দেখা গেছে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এনজাইম কাঁচা সবজি ফলমূলে পাওয়া যায় সেটা ১১০ ফারেনহাইটে নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্না করা থেকে কাঁচা খাবারে এই উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। এই কাঁচা খাবার এসিডিটির যন্ত্রণা থেকে আপনাকে বাঁচাবে।

০৬. ভিটামিন ডি গ্রহন বাড়িয়ে দিনঃ

পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে শরীরে কমপক্ষে ২০০ antimicrobial peptides এর আগমন দেখা যায়। যা পরিপাক তন্ত্রের ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে। ডিম, কড লিভার অয়েল, দুধ, মাছ ভিটামিন ডি এর উৎস।

০৭. গ্লুটামিনঃ

গ্লুটামিন এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের শরীরে উৎপন্ন হয়। ডিম, দুধ, মাছ, পালং শাকে গ্লুটামিন পাওয়া যায়। গ্লুটামিন intestine inflammation এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

০৮. কলাঃ

কলাতে যে এনজইম আছে তা নাড়িতে শ্লেষ্মার মতো পদার্থ নিঃসরণ করে। এর ফলে এসিডিটির কষ্ট থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। কলাতে উপস্থিত পটাসিয়াম পেটের আলসার সারাতে আর এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু এসিডিটির সময় কলা খেলে ১% এর ক্ষেত্রে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।

০৯. বাঁধাকপিঃ

এটা বলা হয়ে থাকে যে কাঁচা বাঁধাকপির রস আলসারের চিকিৎসায় উপকারী ফল দেয়। কিন্তু এটাও প্রচলিত আছে যে বাঁধাকপি গ্যাস ফর্মের অন্যতম কারণ। আসলে এটা একেকজনের শারীরিক গঠনের উপর নির্ভর করে। বাঁধাকপিতে গ্লুটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে আর আমি আগেই আপনাদেরকে গ্লুটামিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।

আরও পড়ুনঃ   আপনি কি গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভুগছেন? এই খাদ্য উপাদানগুলো নিমিষেই সারাবে অ্যাসিডিটির কষ্ট

১০. শশাঃ

যাদের শুধু শশা খেলে এসিডিটি হয়ে থাকে তাদের জন্য বলছি ভাজাভুজির সাথে শসার সালাদ খেয়ে দেখুন এসিডিটি আপনার কাছ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবে।

১১. আরও কিছু হারবাল উপায়ঃ

এক চা চামচ জিরা টেলে নিন এর সাথে এক চা চামচ আজওয়ান নিন। তারপর এক কাপ পানির সাথে ফুটিয়ে অর্ধেক করুন তারপর ছেঁকে নিন। এসিডিটি থেকে মুক্তির জন্য এটা পান করুন। স্বাদ বাড়ানোর জন্য চিনি দিতে পারেন।

১২. যখন এসিডিটি হবে তখন আজওয়ান আর লবণ মিশিয়ে খান।

১৩. এক চা চামচ জিরা ১ লিটার পানিতে ফুটান। ১০মিনিট ধরে ঠাণ্ডা করুন। তারপর হালকা গরম থাকতেই পান করুন। দিনে ২বার এক সপ্তাহ ধরে পান করুন।

১৪. ডালিম এবং বিটের রস এক টেবিল চামচ মধুর সাথে খালি পেটে পান করুন। এক মাস নিয়মিত খান অবশ্যই উপকার পাবেন।

১৫. আদাতে gingerols shogaols নামের ২টি রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা পাচনতন্ত্রকে ঠাণ্ডা করে। আদা সকল প্রকার পেটের পীড়া, গ্যাস প্রতিরোধক। এসিডিটি থেকে তাৎক্ষনিক মুক্তি পেতে এক কাপ গরম পানিতে হাফ চা চামচ আদা কুঁচি মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।

১৬. দারুচিনি পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা হলে সে পানিটা খেয়ে নিন।

নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস আর স্বাস্থ্যকর খাবার এসিডিটি থেকে মুক্তির প্রধান উপায়। তরমুজ, বাদাম, দই, লেবু আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখুন। ধুমপান আর আলকোহল পরিহার করুন। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ এসিডিটির অন্যতম কারণ। সময় থাকতেই এসিডিটির প্রতি সচেতন হন। কারণ এই অল্প কষ্ট একদিন হয়ত প্রকট আকারে ধরা দেবে।

লিখেছেনঃ রোজেন

জেনে নিন বাদামের গুণাগুণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 3 =