ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram) কী?

0
6480
ইকোকার্ডিওগ্রাম

ইকো শব্দের বাংলা অর্থ প্রতিধ্বনি। এই প্রতিধ্বনি কে কাজে লাগিয়ে বাদুর সহ নানা প্রানী রাতের অন্ধকারে চলাচল করে, জাহাজ থেকে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয় ইত্যাদি তথ্য আমাদের সবারই জানা। যখন এই ইকো কে কাজে লাগিয়ে শরীরের পেটের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখা হয় তাকে বলা হয় আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasonogram), আর যখন হৃদপিন্ডের বিভিন্ন অংশ দেখা হয় তাকে বলা হয় ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram)। প্রশ্ন উঠতে পারে শব্দ আবার কিভাবে দেখা যায় তাইনা? আসলে আমাদের শ্রবন মাত্রার উর্ধের (Hypersonic) শব্দ কে একটি Probe এর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়ে তার প্রতিধ্বনি আবার সেই প্রোব দিয়ে গ্রহন করা হয়, এর পর কম্পিউটারে তাকে কৃত্রিম ভাবে ইমেজ বা ছবি আকারে গঠন করে দেখা হয়। যে অঙ্গ যত গভীরে তাকে ভেদ করতে শব্দ কে তত ভেতরে যেতে হয়, তেমনি যে অঙ্গটি যত কঠিন সে তত দ্রুত পুর্ণমাত্রায় শব্দের প্রতিধ্বনি পাঠায়। শব্দের এই ধর্মের উপড় ভিত্তি করেই আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম করা হয়।

ইকোকার্ডিওগ্রামের মাধ্যকে বোঝা যায় হার্ট ঠিক মতো রক্ত পাম্প করতে পারছে কিনা, হার্ট এর কোনো প্রকোষ্ঠ বড়/ছোটো হয়ে গেলো কিনা, এর মাংশপেশী মোটা বা পাতলা হয়ে গেলো কিনা, হার্ট এর Valve গুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, কোথাও অস্বাভাবিক কোনো ফুটা আছে কিনা বা জন্মগত অন্য কোনো ত্রুটি আছে কিনা, কোনো টিউমার আছে কিনা, হার্ট এ পানি জমলো কিনা, হার্টে রক্তের গতি কেমন ইত্যাদি। আসলে ইকোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষাটি আবিস্কারের পর হার্টের বিভিন্ন রোগ সনাক্ত করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। ইসিজির মতো ইকোকার্ডিওগ্রাম করার ও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।-সুত্রঃ সুস্বাস্থ্য

ইকোকার্ডিওগ্রাফি সম্পর্কে আরেকটু আলোচনা –

 

উচ্চ কম্পাংকের শব্দ তরঙ্গ বা আলট্রা সাউন্ডের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে হৃৎপেশীর সঞ্চালন, ভালভ ও প্রকোষ্ঠের বর্তমান অবস্থা এবং হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা হয় এ পরীক্ষায়। সাধারণভাবে এটি ইকো নামেও পরিচিত। এ পরীক্ষার খরচ কিছুটা বেশি।

আরও পড়ুনঃ   সি টি এনজিওগ্রাম কী?

 

হৃদরোগীর বর্তমান অবস্থা বুঝে করণীয় নির্ধারণে এ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া হৃদপিণ্ডের ভালভের জটিলতায় ভুগছেন এমন রোগীর অগ্রগতি নির্ণয় কিংবা অস্ত্রোপচার পরবর্তীতে রোগীর অবস্থা বুঝতে এ পরীক্ষা করা হয়।

প্রস্তুতি

সাধারণ ইকোকার্ডিওগ্রামের জন্য কোন পূর্ব প্রস্তুতি লাগে না। স্বাভাবিক খাবার খেয়ে টেস্টের জন্য যেতে হবে। আর যদি রোগী হৃদরোগের জন্য নিয়মিতভাবে ওষুধ খেতে থাকেন তবে সে ওষুধও খেতে হবে। গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে ইসিজি ছাড়াই ইকো করা হয়।

পরীক্ষা

খালি গায়ে পরীক্ষাটি করতে হয়। রোগীকে বাম দিকে কাত হয়ে পরীক্ষণ টেবিলে শুয়ে পড়তে বলা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ মনিটরের জন্য রোগীর বুকে তিনটি ইলেকট্রোড বা তড়িৎদ্বার লাগানো হয়। আলট্রাসাউন্ড উৎপাদনকারী ট্রান্সডিউসারটি রোগীর বুকে রেখে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ছবি নেয়া হয়।

পরিষ্কার ছবি পেতে চামড়ায় এবং ট্রান্সডিউসারটির প্রান্তে এক ধরনের জেল লাগানো হয়। এটি কোনভাবেই চামড়ার জন্য ক্ষতিকারক নয়।

যে শব্দতরঙ্গ উৎপাদন করা হয় তা মানুষের শ্রাব্যতার সীমার বাইরে হলেও দু’একটি ক্ষেত্রে শোনা যেতে পারে। হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন অবস্থানের ছবি নেয়ার জন্য রোগীকে কিছু সময় পরপর অবস্থান বদলাতেও বলা হয়। অল্প সময়ের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ রাখতেও বলা হতে পারে।

এটি একটি নন-ইনভেসিভ পরীক্ষা এবং কোন ধরনের ব্যথা অনুভূত হয় না। তবে জেলের জন্য চামড়ায় কিছুটা ঠাণ্ডা অনুভূতি হতে পারে, সনোগ্রাফার চামড়ায় ট্রান্সডিউসারটি লাগালে সামান্য চাপ অনুভূত হতে পারে। পরীক্ষাটি করতে ৪০ মিনিটের মত সময় লাগে এবং পরীক্ষা শেষে রোগী স্বাভাবিক কাজে ফিরে যেতে পারে।

পরীক্ষা শেষে রোগীর হৃদযন্ত্রের চিত্র সম্বলিত একটি প্রিন্ট আউট এবং চিকিৎসকের লেখা একটি রিপোর্ট রোগীকে দেয়া হয়। এ রিপোর্ট দেখে হৃদরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি পরীক্ষাটি করাতে বলেছেন তিনি সিদ্ধান্ত নেন।

 এনজিওগ্রাম কি এবং কেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × two =